• মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৭ পূর্বাহ্ন
  • Bengali Bengali English English

বাংলাদেশ ৪০ বছর বয়সী ফেরি শাহ আমানতের মেয়াদই ফুরিয়েছিল

রিপোর্টার / ১৪৯ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২১
মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় বুধবার সকালে কাত হয়ে উল্টে যাওয়া ফেরি শাহ আমানতকে উদ্ধারে বাঁধা হয়েছে উদ্ধারকারী জাহাজ হামজার সঙ্গে।

গত শতকের ৮০ এর দশকে ডেনমার্ক থেকে আনা রো রো ফেরিটি বিআইডব্লিউটিসির বহরে যুক্ত হয়।

এর মেয়াদ ৩০ বছর হলেও মেরামতের পর তা ১০ বছর বেড়েছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) কর্মকর্তারা।

তবে এভাবে মেয়াদ বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই বলে মত দিচ্ছেন বুয়েটের নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জুবায়ের ইবনে আউয়াল, যিনি এই দুর্ঘটনা তদন্তে সরকার গঠিত কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট থেকে যানবাহন নিয়ে বুধবার সকাল ৯টার কিছুক্ষণ পর পাটুরিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়েছিল শাহ আমানত। পদ্মা পার হয়ে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাটে পৌঁছানোর পরপরই সেটি কাত হয়ে নদীতে উল্টে যায়।

৮০০ টন ওজনের শাহ আমানত ফেরি ২৫টি যানবাহন বহন করতে পারে। দুর্ঘটনার সময় ফেরিতে ছিল ১৭টি ট্রাক, একটি প্রাইভেটকার ও আটটি মোটরসাইকেল।

বাংলাদেশের ইতিহাসের রো রো ফেরির এভাবে দুর্ঘটনা পড়া এটাই প্রথম বলে জানালেন বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই ফেরিটি পুরনো এটা সত্য। তবে এর আগে কখনও রো রো ফেরি এরকম দুর্ঘটনায় পড়েনি।”

বিআইডব্লিউটিসির উপপরিচালক (জনসংযোগ) নজরুল ইসলাম মিশা জানান, ১৯৮০ সালে শাহ আমানতসহ আটটি রো রো ফেরি ডেনমার্ক থেকে আনা হয়েছিল।

তাজুল বলেন, “এমনিতে একটি ফেরির ইকোনমিক লাইফ ৩০ বছর। এই ফেরির (শাহ আমানত) সার্ভিসে আসার বয়স ৩৫ বছরের ওপরে।

“তবে এগুলো অনেক শক্ত পোক্ত, তাই মন্ত্রণালয় এগুলো অতিরিক্ত ১০ বছর ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছিল।”

এ বছরে জুলাই মাসে ডক থেকে শাহ আমানত ফেরিটির ‘টুকটাক মেরামত’ হয়েছিল জানিয়ে বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক মো. আশিকুজ্জামান বলেন, “এর ফিটনেসে কোনো ত্রুটি নেই।”

বুয়েটের শিক্ষক জুবায়ের বলেন, “সাধারণত ২০ থেকে ২৫ বছর মেয়াদ হলেই তা (ফেরি) বাদ দিতে হয়। আপাতত মনে হচ্ছে ফেরিগুলো তো অনেক পুরনো।”

মেরামতের পর ১০ বছর মেয়াদকাল বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “মেরিনে এমন কোরো রকভারি টার্ম নেই যে মেরামত করে ১০ বছর মেয়াদ বাড়ানো যায়।”

কীভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটল, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ফেরিটি যাত্রা শুরুর পরপরই এতে পানি উঠেছিল।

বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক আশিকুজ্জামান বলেন, “ভেতরে পানি ঢুকলে তো ফেরি ঘাটে আসতে পারত না, ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যেত। আবার এভাবে কাত হয়ে যাওয়ায় মনে হচ্ছে ভেতরে পানি ঢুকছে হয়ত। কিছুই বুঝতে পারছি না।”

ফেরি ছাড়ার আগে তার ফিটনেস যাচাইয়ের ব্যবস্থা থাকে জানিয়ে বিআইডব্লিউটিসি চেয়ারম্যান বলেন, “প্রতিটা ফেরি যানবাহন নিয়ে ছাড়ার আগে একবার করে চেক করার নিয়ম রয়েছে। এই ফাইলটি ছাড়ার আগে নিয়ম মেনে চেক করা হয়েছে কি না, তা যাচাই করবে এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত দল।”

এই নৌ দুর্ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিআইডব্লিউটিসি, যার আহ্বায়ক করা হয়েছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুলতান আব্দুল হামিদকে।

বুয়েট শিক্ষক জুবায়ের ছাড়া কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকছেন-বিআইডব্লিটিএএর পরিচালক রফিকুল ইসলাম তালুকদার, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের নটিক্যাল সার্ভেয়ার অ্যান্ড এক্সামিনার ক্যাপ্টেন সাইদ আহমেদ, ফরিদপুর অঞ্চলের নৌ পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন ও বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক মো. রাশেদুল ইসলাম।

এই কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ