গত ৩ অগাস্ট দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি দিয়ে বিশ্বকাপের প্রস্তুতির স্রোতে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। পরে ঢাকাতেই নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে ৫ ম্যাচের আরেকটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ। এরপর এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে খেলেছে পাঁচটি ম্যাচ।
এই ১৫ ম্যাচ মিলিয়ে ফিফটি সাকল্যে পাঁচটি! দুটি করে এসেছে মাহমুদউল্লাহ ও মোহাম্মদ নাঈম শেখের ব্যাট থেকে, অন্যটি করেছেন মুশফিকুর রহিম। সবচেয়ে বড় ইনিংসটি কেবল ৬৪ রানের।
অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ড সিরিজে অবশ্য উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য অনেক কঠিন ছিল। সেখানে বড় রান না পাওয়াটা তবু বোধগম্য। কিন্তু বিশ্বকাপেও ৫ ম্যাচে ফিফটি করতে পেরেছেন কেবল দুজন, নাঈম দুটি আর মুশফিক একটি।
অস্ট্রেলিয়া সিরিজ থেকে এখনও পর্যন্ত অধিনায়কের সঙ্গে সবকটি ম্যাচ খেলেছেন আফিফ হোসেন ও কিপার-ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান। অন্তত ১০ ম্যাচ খেলেছেন ১০ জন। মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন চোটের জন্য ইংল্যান্ড ম্যাচের আগে ছিটকে না গেলে সংখ্যাটি ১১-ই হতো।
অর্থাৎ বাংলাদেশ বেশ আগেই ঠিক করে রেখেছে মূল একাদশ। কিন্তু ব্যাটিংয়ে রাখেনি তাদের তেমন কোনো বিকল্প। বাইরে আছেন কেবল সৌম্য সরকার ও শামীম হোসেন। রান নেই তাদের ব্যাটেও।
একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে ১৫ ইনিংসেই খেলা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে এই সময়ে এসেছে ৩০ গড়ে সর্বোচ্চ ৩৩০ রান। এর পরেই আছেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। ১৪ ইনিংসে বাঁহাতি এই ওপেনার ২৩.৩৫ গড় ও ৯৭.৯০ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৩২৭ রান। এই দুই জন ছাড়া দুইশ ছাড়াতে পেরেছেন কেবল সাকিব আল হাসান ও আফিফ।
৩৫-এর বেশি রান করেছেন এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কেবল আফিফের (১২২.৩৪) স্ট্রাইক রেট ১২০-এর বেশি। তিনি ছাড়া আর কেবল চারজনের স্ট্রাইক রেট একশ ছুঁয়েছে। সেখান ১০৫.৪৩ স্ট্রাইক রেটে এগিয়ে মাহমুদউল্লাহ।
বিস্ময়করভাবে, দলের বড় ভরসা মুশফিকের স্ট্রাইক রেট এই সময়ে কেবল ৯১.৫৭। ৭ ম্যাচে সৌম্যর রান কেবল ৩৭, স্ট্রাইক রেট ৫৭.৮১। শেষে ঝড় তোলার জন্য যাকে দেখা হচ্ছে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হিসেবে, সেই শামীমের রান ৪ ইনিংসে কেবল ১২, স্ট্রাইক রেট ৫৪.৫৪।
অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরে মন্থর ও টার্নিং উইকেটে খেলে বাংলাদেশ। সেখানে স্বাভাবিকভাবেই ভুগতে হয় ব্যাটসম্যানদের। টি-টোয়েন্টির সঙ্গে একেবারেই মানানসই নয়, এমন উইকেটে ১০ ম্যাচ খেলার পর যেন রানের পথ ভুলে গেছেন ব্যাটসম্যানরা।
ওমানে প্রাথমিক পর্বে তুলনামূলক ভালো উইকেটেও ধারাবাহিকতার দেখা পাননি তারা। শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে মোটামুটি প্রত্যাশা মেটাতে পারে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে বোলিং ও ফিল্ডিং ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেনি তারা।
আবু ধাবিতে গত মঙ্গলবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ধুঁকতে ধুঁকতে কোনো মতে ১২৪ রান করে বাংলাদেশ। দায়িত্ব নিয়ে খেলার কিংবা সংগ্রহ বড় করার তাড়না খুব একটা দেখা যায়নি তাদের খেলায়। গড়ে তুলেতে পারেনি তেমন কোনো জুটি।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা নাসুম আহমেদ বলেন, ব্যাটসম্যানদের ছন্দে না থাকা নিয়ে সব সময়ই কথা বলছেন তারা, কিন্তু মিলছে না কোনো সমাধান।
“(ব্যাটসম্যানদের রান না থাকা নিয়ে) আমাদের মধ্যে কথা হয়। আমরা প্রথম ছয় ওভারে রান তুলতে পারছি না। এজন্য আমরা পিছিয়ে পড়ছি। রান তুলতে পারছি না, আবার উইকেটও পড়ছে। এটা নিয়ে সবাই আলোচনা করছি। সবারই ভালো কিছু করার চেষ্টা আছে। কিন্তু হচ্ছে না।”
কেন হচ্ছে না, সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন ব্যাটসম্যানরা নিজে কিংবা প্রধান কোচ ও ব্যাটিং কোচ। মিরপুরের ১০ ম্যাচে তারা বরাবরই কাঠগড়ায় তুলেছেন উইকেটকে। তেমন উইকেটেও অস্ট্রেলিয়ার মিচেল মার্শ ও নিউ জিল্যান্ডের টম ল্যাথাম দেখিয়েছেন, ক্রিজে থাকলে ঠিকই রান পাওয়া সম্ভব।
মিরপুরের ওই উইকেটের চেয়ে ঢের ভালো উইকেটেই খেলা হচ্ছে এখন। কিন্তু ভুল শট নির্বাচন, অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি, আগে থেকে শট ঠিক করে রাখার মতো কাজগুলোর জন্য বিলিয়ে আসতে হচ্ছে উইকেট। ব্যাটসম্যানদের খেলায় দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে আত্মবিশ্বাসের অভাব। সবাই যেন কাজ ফেলে যাচ্ছেন পরের ব্যাটসম্যানের জন্য। সেটির মাশুল দিচ্ছে বাংলাদেশ।