২০০৪ সালের লাক্স আনন্দধারা মিস ফটোজেনিক প্রতিযোগিতায় প্রথম রানারআপ তানজিকা আমিন। ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে কাজের সংখ্যা তুলনামূলক কম। আজ রাতে এনটিভিতে দেখানো হবে নাটক ‘মেহমান’। এটির অন্যতম একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। অন্য টেলিভিশন চ্যানেলেও প্রচারিত হচ্ছে তাঁর একাধিক ধারাবাহিক।
অভিনয়ের খবর বলুন।
চলছে আরকি। নতুন তিনটি ওয়েব সিরিজে অভিনয়ের কথা চলছে। বিস্তারিত কিছু জানানোর মতো হয়নি।
আপনার কি কাজ কম করা হয়?
ঠিকই ধরেছেন, কাজ কমই করা হয়।
সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ আছে কি?
কোনো কারণ নেই। আমি যে সময়টায় বিরতি নিয়েছিলাম, তখন বিনোদন অঙ্গনে অনেক মেধাবী মেয়ে কাজ শুরু করে। আমি আবার একটু ঘরকুনো। আমার মতো থাকতে পছন্দ করি। তাই আমার সঙ্গে কারও যোগাযোগ সেভাবে ছিল না। সেই সময়ে যাঁরা কাজ শুরু করেন, তাঁদের সঙ্গে আমার আর মানিয়ে নেওয়া হয়ে ওঠেনি। এটা আমারই ব্যর্থতা। কারণ, আমি নিজেই চেষ্টা করিনি। এটা অলসতা নাকি অন্য কোনো কারণে তা–ও জানি না। ঘরেই বসে ছিলাম, ফোনে যাঁরা আমাকে পেয়েছেন, তাঁরা কাজ করিয়ে নিয়েছেন।
এই বিরতিটার শুরু কবে থেকে?
আমার বিয়ের পর থেকে এটা হয়েছে। ডিভোর্সের পরও অনেকটা সময় পর্যন্ত। ২০১১ সালের দিকে তো আমি বিয়ে করলাম। এসব কারণে লম্বা সময় কেটে গেল। বিয়ের পর আমি কিন্তু নিজের ইচ্ছাতেই কাজ কমিয়েছি। তখন বয়স একটু কম ছিল, মনে হতো যে না করলেও হয়তো চলবে। আমি ২০০৪ সাল থেকে বিনোদন অঙ্গনে কাজ করছি। তখন টানা খণ্ডনাটক ও ধারাবাহিকে অভিনয় করেছি। আমি নিজেকে আরও মেলে ধরতে না পারার কারণ আমিই। আমাকে তো ঘরে থেকে ডেকে নিয়ে কাজ করার কথা বলবে না, তাই না।
এটা নিয়ে দুঃখবোধও তো নেই।
একদমই না। এমন না যে আমি ট্রাই করেছি, এরপর ফেল করেছি। অনেক পড়াশোনা করলাম, রেজাল্ট খারাপ হলো, সে রকম হলে মন খারাপ হয়। আমি তো পড়াশোনাই করিনি, রেজাল্ট খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। (হাসি)
এনটিভিতে আপনার ‘মেহমান’ নাটকটি প্রচার হচ্ছে…
অনেক দিন ধরে এই নাটকের কাজ করছি। করতে হচ্ছে। জীবিকার তাগিদেও আমাদের শুটিং করতে হয়।
‘গহীনের গান’ নামের একটি চলচ্চিত্রেও আপনাকে দেখা গেছে।
আমি আরও একটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছি। সেটার কথা অবশ্য কারও মনে থাকার কথা নয়। লাক্স আনন্দধারা ফটোজেনিকে রানারআপ হওয়ার পর ‘বকুল ফুলের মালা’ নামের একটি চলচ্চিত্রে আমি অভিনয় করেছি রিয়াজ ভাইয়ের বিপরীতে। চলচ্চিত্রটি সেভাবে আশানূরূপ সাফল্য পায়নি। এরপর চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সাহসটাও হয়নি আমার। তবে পরিচিত সবাই আমাকে বলতেন, ফিল্মে নিয়মিত হলে অনেক ভালো করতাম। আমার হাইট অ্যান্ড এভরিথিং চলচ্চিত্রের উপযোগী। আমি জানি, আমি দেখতে অসুন্দর না, খুব বেশি খারাপ কাজও করি না। সবার প্রতি সম্মান বজায় রেখেই বলছি, আমার চেয়ে আরও কম যোগ্য হয়েও তারা অনেক ভালো কাজ করে ফেলেছে। তবে দোষ কিন্তু আমার।
আপনার সিনেমা–ভাগ্য খারাপ বলতে চাইছেন কি?
আমার ফিল্মের ভাগ্যটাই খারাপ। ভালো পরিচালকও পাইনি। তবে আমার প্রথম সিনেমাটা যদি হিটও হতো, তা–ও তখন চলচ্চিত্রে কাজ করার মতো পরিবেশ ছিল না। তখন খুব পচা চলচ্চিত্র তৈরি হতো। এ কারণে অবশ্য পরিবারও চলচ্চিত্রে কাজ করতে দিত না। সিনেমা হলেও দর্শক যেতেন না।
‘গহীনের গান’ চলচ্চিত্রের পর নতুন কোনো প্রস্তাব পেয়েছেন?
প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু এতটা কমার্শিয়াল সিনেমায় অভিনয় করতে রাজি হইনি।
কোন ধরনের সিনেমায় অভিনয় করতে চান?
নাচে–গানে ভরপুর সিনেমায় মোটেও কাজ করতে চাই না। কারণ, আমি নাচিও খুব জঘন্য। গল্পনির্ভর চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে চাই।
বিনোদন অঙ্গনেই থাকবেন নাকি অন্য কিছু নিয়েও ভাবছেন?
এই অঙ্গনে এত বছরের সময় ও ভালোবাসার ইনভেস্টমেন্টের পর ফেরার তো উপায় নেই। এখন আমি আগের চেয়ে বেশি সিরিয়াস, আগে বয়সও ছিল কম। মাত্র ২০ বছর বয়সে বিনোদন অঙ্গনে কাজ শুরু করেছি।
আপনার কি মনে হয় বিয়ের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল?
একদমই তা নয়। আমাদের একটা অভ্যাস, কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সেটা যদি ঠিকমতো কাজ না করে, তাহলে বলি যে ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। আমার বিয়ের ডিসিশন পারফেক্ট ছিল, ডিভোর্স আনফরচুনেটলি হয়ে গেছে। সুন্দর সময় কেটেছে। আমার সময়টা আমি উপভোগ করেছি। এসব নিয়ে আমার কোনো অনুতাপ বা অনুশোচনা নেই।
সংসারজীবন নিয়ে এখন আর কোনো চিন্তাভাবনা?
বিয়ে করব। বিয়ে করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। আমার মা–বাবা নাতি–নাতনির মুখ দেখার জন্য অস্থির হয়ে যাচ্ছেন। আমি তো তাঁদের একমাত্র সন্তান, আমার প্রতি তাঁদের একটা প্রত্যাশাও আছে। আমারও তো জীবনে একজন সঙ্গী দরকার। সবকিছু মিলে আই নিড আ সংসার।
জীবনসঙ্গীর দেখা কি পেয়েছেন?
প্রচারণা চলছে আরকি। খোঁজাখুঁজি চলছে। বিয়ে অবশ্যই প্রেম করেই করব। কারণ, একটা জানাশোনা তো লাগবেই। আর্ট মাধ্যমে আমরা যারা কাজ করি, তাদের জীবনধারণটাই একটু আলাদা। প্রথম বিয়েতে একটা ধাক্কা খাওয়াতে পরেরটা বুঝেশুনে করতে চাই। যেটাই হোক না কেন, এমন একটা মানুষকে বেছে নিতে চাই, যার সঙ্গে আগামীর সময়টা কাটিয়ে দিতে পারি।