সৈয়দ শামসুল হক চলে গেছেন আজ পাঁচ বছর। তাঁর চলে যাওয়ার আগমুহূর্ত থেকে পর পর্যন্ত ছোট করে বা বড় করে কেউ যদি তাঁকে স্মরণে রেখে থাকে, সেটি আমাদের দেশের দৈনিক কাগজগুলো। আমি কৃতজ্ঞচিত্তে তাদের ধন্যবাদ জানাই। আজ এত বছর পরে আমি আমার শোক থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছি। তাঁর তিরোধানের খবর দেখে সহ্য করতে পারতাম না বলে একটি খবরের কাগজও আমি এত বছর খুলে দেখার চেষ্টা করিনি। এখন যখন করছি, তখন আমার হৃদয় আনন্দ আর কৃতজ্ঞতার ভারে অবনত হয়ে যাচ্ছে।
এই বলে সৈয়দ হকের আক্ষেপ ছিল যে ‘আমি আমার ১৬ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারলাম না’, কিন্তু তাঁর জন্ম কিংবা প্রয়াণ দিবসে তাঁকে নিয়ে ছাপা কাগজগুলো দেখে এখন আমার এমত বিশ্বাস যে সৈয়দ হক তাঁর দেশের মানুষের কাছে সেদিন পৌঁছাতে পেরেছিলেন। তাদের সবার কাছে আমরা অশেষ কৃতজ্ঞ।
দুই.
আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের আরও কিছু আছে, আর সেটি ‘প্রথমা প্রকাশন’–এর প্রতি। সৈয়দ শামসুল হকের প্রতিটি প্রয়াণ বা জন্মদিনে ‘প্রথমা প্রকাশন’ বিশেষ করে চেষ্টা করেছে তাঁর একটি বই অন্তত প্রকাশ করতে। কখনো তাঁর রেখে যাওয়া অপ্রকাশিত বই, কখনো–বা বিস্মৃত কোনো গ্রন্থ।
এই করোনাকালেও বছরের পর বছর ধরে সে প্রকাশনায় তাঁদের কোনো বিরতি নেই। এ জন্য তাঁদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞ বোধ না করে পারি না।
প্রথমা প্রকাশন থেকে সৈয়দ শামসুল হকের জীবদ্দশায় বেশ কিছু পাঠকনন্দিত বই তো প্রকাশিত হয়েছেই, তাঁর প্রয়াণের পরও প্রথমা তাঁকে ভুলে যায়নি। একে একে প্রকাশ করেছে শব্দই চিকিৎসিত করে, হে বৃদ্ধ সময়, এক নারীর জীবন, আনারকলি, যে কোনো দরোজার মতো নতুন বইসহ তাঁর পুরোনো কিছু বইয়ের নতুন সংস্করণ। প্রতিবার যেমন একটি করে বই প্রকাশিত হয়, এবারও তেমনই বের হলো সৈয়দ শামসুল হকের অগ্রন্থিত উপন্যাস পতন। দেখে আমাদের মন ভরে উঠেছে। মনে হচ্ছে, এই তো সৈয়দ শামসুল হক বেঁচে আছেন। এই তো তাঁর নতুন প্রকাশিত বই পাঠকের, বিশেষ করে তরুণদের হাতে গিয়ে পৌঁছাচ্ছে।
একজন তরুণ বইয়ের পৃষ্ঠা খুলে দেখছেন, সৈয়দ শামসুল হক একজন তরুণের কাছে পঠিত হচ্ছেন—এর চেয়ে খুশির খবর একজন কবি-সব্যসাচীর জন্য আর কী হতে পারে?
- আনোয়ারা সৈয়দ হক: কথাসাহিত্যিক; প্রয়াত সৈয়দ শামসুল হকের স্ত্রী