বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ইইউ সদরদপ্তরে মঙ্গলবার উভয়পক্ষের সচিব পর্যায়ের ‘ডিপ্লোম্যাটিক কনসালটেশনস’ হয়।
বুধবার ইইউ ও বাংলাদেশের যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বৈঠকের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলা হয়, “গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বাংলাদেশ ও ইউরোপের একীভূত মূল্যবোধের অংশ।
”ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) প্রসঙ্গ বৈঠকে উত্থাপন করেছে ইইউ। অনলাইনে অপরাধ দমন করার উদ্দেশ্যের বাইরে গিয়ে আইনের কয়েকটি ধারা ব্যবহারের ঝুঁকি বিষয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছে।”
একইসঙ্গে আইনটির অধীনে চলমান কয়েকটি মামলার বিষয়েও বৈঠকে জানতে চেয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলোর এ জোট।
নানা পক্ষের আপত্তি, সাংবাদিকদের উদ্বেগের মধ্যে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ব্যাপক সমালোচিত ৫৭সহ কয়েকটি ধারা বাতিল করে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হলেও পুরনো আইনের বাতিল হওয়া ধারাগুলো নতুন আইনে রেখে দেওয়ায় এর অপপ্রয়োগের শঙ্কা থেকেই যায়।
২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অনলাইনে কোনো মন্তব্য শেয়ার করার কারণেও বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি, ডিজিটাল ডিভাইস জব্দ করা এবং গ্রেপ্তারের সুযোগ দেওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে।
আইনটি পাস হওয়ার আগে থেকেই এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনারের কার্যালয়ের করা ইউনিভার্সাল রিরিওডিক রিভিউয়ে (ইউপিআর) এ আইনের পর্যালোচনা করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
ইউপিআর থেকে আসা সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশকে ব্রাসেলস বৈঠকে উৎসাহিত করেছে ইইউ। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে সর্বশেষ অবস্থা জানানোর পাশাপাশি নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেছে।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। ইইউ প্রতিনিধি দলের প্রধান ছিলেন এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য ইউরোপিয়ান এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিস ম্যানেজিং ডিরেক্টর গুনার ভিনান্ড।
জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শুরু করে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, বাণিজ্য, অভিবাসন, রোহিঙ্গা সঙ্কটসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে।
ইউরোপে অবৈধ হয়ে পড়া নাগরিকদের পরিচয় নিশ্চিত করে তাদের ফেরানোর ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি অর্জনকে স্বাগত জানায় ইইউ।
২০১৭ সালে তৈরি ওই এসওপির আওতায় এখন প্রায় দেড় হাজার বাংলাদেশিকে ফেরানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
এসওপি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের ‘ব্যর্থতার’ কথা তুলে ধরে গত জুলাইয়ে শেংগেন ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন বিধিনিষেধ আরোপের সুপারিশ করেছিল ইইউ কাউন্সিল। পরে বাংলাদেশের দেনদরবারের সেই সুপারিশের বাস্তবায়ন স্থগিত হয়।
সেদিকে ইংগিত করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ও জমে থাকা বিষয়গুলোর সমাধান করে বাস্তবিক ফলাফল দেখাতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইইউ।”
প্রতিশ্রুতি পূরণের আহ্বানের বিপরীতে বাংলাদেশ বৈঠকে দক্ষ ও আধা-দক্ষ নাগরিকদের বৈধ অভিবাসনের পথ তৈরি করার প্রস্তাব করেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সহযোগিতার নতুন কৌশল উপস্থাপন করেছে ইইউ। বৈঠকে এ অঞ্চলের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং নৌ-নিরাপত্তার পাশাপাশি জাতিসংঘের অধীন সন্ত্রাসবাদ দমন ও অন্যান্য সহযোগিতার বিষয়ে উভয়পক্ষ আলোচনা করেছে।