মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও বিএনপিতে গণতন্ত্রের কোনো চর্চা নেই দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তাদের সম্মেলনের এক বছর পর আমাদের সম্মেলন হয়েছিল। আমাদের এক টার্ম শেষ হয়ে আরেক টার্মেরও এক বছর আট মাস পেরিয়ে গেছে। আমাদের সম্মেলনে আমি যখন প্রথমবার সাধারণ সম্পাদক হয়েছি, এর এক বছর আগে তাদের জাম্বুজেট ৫০১ সদস্যের কমিটি হয়েছে। কিন্তু এখনো সেই কমিটি দিয়েই চলছে।’
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘তারা মুখে গণতন্ত্রের বড় বড় বুলি আওড়ায়। তাদের নিজেদের ঘরেই গণতন্ত্রের চর্চা নেই। তাদের সম্মেলন হয় না, তাদের কমিটি হয় না, কমিটির মিটিং পর্যন্ত হয় না। এ অবস্থা দিয়ে যে পার্টি চলছে, তারা দেশে গণতন্ত্র কীভাবে প্রতিষ্ঠা করবে? সেটাই একটা বিরাট প্রশ্নচিহ্ন হয়ে ঝুলে থাকে।’
বিএনপি সরকারবিরোধী সিরিজ ষড়যন্ত্রের রূপকল্প তৈরির গোপন বৈঠক করছে বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের বলেন, অবৈধ, অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমানের হাতে প্রতিষ্ঠিত বিএনপির গণতান্ত্রিক রীতিনীতির কোনো দায়ভার নেই। তাদের তথাকথিত বিশেষ যে সিরিজ সভাগুলো হয়েছে, এগুলো অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চা নয়। এই সিরিজ সভা সিরিজ বোমার পৃষ্ঠপোষক বিএনপির সিরিজ ষড়যন্ত্রের রূপকল্প তৈরির গোপন বৈঠক।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখানে গণতন্ত্রের কিছু নেই। আছে কীভাবে সরকারকে ঠেকাবে, কীভাবে দেশের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করবে, কীভাবে বিভিন্ন অপশক্তিকে উসকে দেবে। কারণ বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক শক্তির বিশ্বস্ত ঠিকাদার হচ্ছে বিএনপি। তারাই পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে এই সাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলোকে জিইয়ে রেখেছে। আমরা জানি, তাদের এখন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রতি কোনো শ্রদ্ধা নেই। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র তারা করে।’
নির্বাচন কমিশন গঠন ও বিএনপির তৎপরতাকে মিলিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আগামী বছর নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রাক্কালে বিএনপি আবার নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশন যথাসময়ে যেভাবে হয়, আমাদের দেশের আইনগত প্রক্রিয়ায়ই করার যে বিধান রয়েছে, সেভাবে সংবিধান অনুযায়ী গঠন করা হবে। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গতবারও রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন, সেই সার্চ কমিটিতে বিএনপিরও প্রতিনিধিত্ব ছিল। তাদের একজন এখনো আছে। বিভিন্ন সময় তিনি নোট অব ডিসেন্ট দেন, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। এটা গণতন্ত্রের বিউটি। বাইরে এসে তিনি মাঝেমধ্যে যে অবস্থার সৃষ্টি করেছেন, সেটা গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও নির্বাচন কমিশনের জন্য প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
আওয়ামী লীগে আগাম সম্মেলন হচ্ছে না
আওয়ামী লীগের আগাম সম্মেলন হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগের ইতিহাসে আগাম কোনো সম্মেলন হয়নি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘২০১৯ সালের ২০-২১ ডিসেম্বর আমাদের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল। যারা গত ১২ বছরেও বাংলাদেশে সম্মেলন করে না, যারা আমারও এক বছর আগে সম্মেলনে মহাসচিব নির্বাচিত হয়ে এখন পর্যন্ত আছে, তাদের জিজ্ঞাসা করেন না!’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আগাম সম্মেলন কেন হবে? আওয়ামী লীগের ইতিহাসে আগাম কোনো সম্মেলন হয়নি। নির্বাচন যথাসময়ে হবে, আওয়ামী লীগের সম্মেলনও যথাসময়ে হবে।’
বিএনপির দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির প্রতি যেকোনো ষড়যন্ত্র দেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধান অনুযায়ী শক্ত হাতে প্রতিহত করা হবে। আমরা জনগণকে দেশবিরোধী সব ষড়যন্ত্র থেকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘আমাদের পার্টিকে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দানকারী জঙ্গি-সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক বিএনপির ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে দেশবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছি। আন্দোলনের নামে দেশে সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির যেকোনো প্রয়াস আওয়ামী লীগ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমুচিত জবাব দেবে।’
মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বন্ধ করলেন ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগের নাম জড়িয়ে গড়ে ওঠা সংগঠনগুলোয় দলীয় নেতাদের অতিথি হয়ে না যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
আজ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের জন্য মঞ্চ প্রস্তুত করা হলেও সেই অনুষ্ঠান বন্ধ করার নির্দেশনা দেন ওবায়দুল কাদের।
এর পরপরই মঞ্চ সরিয়ে নিতে দেখা যায়। এমনকি বাঁশ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন সরঞ্জাম সরিয়ে নিতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কিছুক্ষণ অগে খবর পেলাম, আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে প্রচার লীগ নামের এক ভুঁইফোড় দোকান প্রতিষ্ঠালগ্নের কী আয়োজন করেছে—আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ। মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের ব্যাপারে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু লীগ আর আওয়ামী যখন যুক্ত হয়, তখন এখানে আমাদের সংশ্লিষ্টতা এসে যায়। এখানে আমাদের ভাবমূর্তির সঙ্গে বিষয়টি এসে যায়। কারণ, এসব দোকান অনেকে খুলে থাকে চাঁদাবাজির জন্য, এগুলো আসলে চাঁদাবাজির প্রতিষ্ঠান।’
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘সবাই করে, তা নয়। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, তারা চাঁদাবাজিনির্ভর। চাঁদাবাজি পার্টি। তারা দলের নাম ভাঙায়। কাজেই এসব সংগঠনের কোনো ধরনের আয়োজনে, বৈঠকে, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, যেটাই হোক, আমি কেন্দ্রীয় নেতাদের আহ্বান জানাব, আপনারা কোনো অবস্থাতেই এসব সংগঠনের সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থিত থাকবেন না, থাকতে পারেন না। এটা আমাদের পার্টির নীতি-কৌশলের বিরুদ্ধে।’
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর নেতারা। পরে তাঁরা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আহমদ হোসেন, এস এম কামাল, মির্জা আজম, অসীম কুমার উকিল, বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।