• মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫৯ পূর্বাহ্ন
  • Bengali Bengali English English

উল্টো ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী নারীর

রিপোর্টার / ৮৮ বার
আপডেট : সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

গতকাল রোববার ঢাকার মালিবাগে সিআইডি সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে উম্মে ফাতেমা রোজীর (৪৫) বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগের বিস্তারিত তুলে ধরেন অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী ওই নারী বাংলাদেশি সহযোগীদের নিয়ে একটি প্রতারক চক্র গড়ে তুলেছেন। পরিবারসহ অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ভুয়া ভিসা ও জাল কাগজপত্র সরবরাহ করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন তাঁরা। সম্প্রতি এ ফাঁদে পা দিয়ে উম্মে ফাতেমা রোজীর দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৭৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা দিয়েছেন ওই আইনজীবী। এরপর কাগজপত্র ও ভিসা হাতে পেয়ে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখতে পান, সবই জাল। পরে রোজীর বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে গতকাল ‘অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী নারীর ফাঁদে পড়ে ৭৫ লাখ টাকা খুইয়েছেন আইনজীবী’ শিরোনামে প্রথম আলো অনলাইনে একটি খবর প্রকাশিত হয়। ওই খবর নিয়ে অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। তাঁদের কৌতূহল, কে এই উম্মে ফাতেমা রোজী, আর অভিযোগকারী ওই আইনজীবী কোন প্রলোভনে এত টাকা দিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উম্মে ফাতেমা রোজী অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ব্যাংকসটাউন এলাকায় বসবাস করেন। পরে তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়।

উম্মে ফাতেমা রোজী উল্টো অভিযোগ করে বলেন, তাঁর ১ কোটি ৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন এ বি এম খায়রুল ইসলাম নামের ওই আইনজীবী। বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জে একটি মাদ্রাসা স্থাপনে জমি কেনার জন্য তাঁর স্বামীর এ টাকা তাঁর মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল, যার পুরোটাই ওই আইনজীবী হাতিয়ে নিয়েছেন।

উম্মে ফাতেমা রোজী জানান, অ্যাডভোকেট খায়রুল ইসলাম ও তাঁর বাড়ি ঝালকাঠি জেলার একই এলাকায়। সম্পর্কে ওই আইনজীবী তাঁর চাচাতো ভাই। রোজী বলেন, ‘জুলাই থেকে আমার বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চলছে, সেগুলো পুরোটাই একতরফা। আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। আমি গত জুলাই মাসেই সিডনির একটি থানায় সাধারণ ডায়েরি ও আদালতে মামলা করেছি। শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে আমি সব কিছু খোলসা করব।’

তবে তাঁর এ অভিযোগ ‘পুরোপুরি মিথ্যা’ বলে দাবি করেছেন আইনজীবী খায়রুল ইসলাম। তিনি সোমবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘উনি আমাদের পরিবারের ৯ জনকে আত্মীয় হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় নেওয়ার জন্য ভিসা পাঠিয়েছিলেন। পরে দেখা গেছে, সবকিছু জাল। আমাদের বন্ধুবান্ধব আরও অনেককে এভাবে ঠকিয়েছেন। আর কিশোরগঞ্জে মাদ্রাসা কেনার জন্য আমাকে টাকা কেন দেবেন? আমি তো কখনো কিশোরগঞ্জে যাইনি। এমনকি চিনিও না।’

উম্মে ফাতেমা রোজী ও তাঁর বাড়ি ঝালকাঠি জেলায় বলে স্বীকার করেছেন খায়রুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘আমার স্ত্রীকে উনি বোন ডাকতেন। আর আমাকে ভাই ডাকতেন।’

যাচাই-বাছাই ছাড়া তাঁকে কেন এত টাকা দিলেন, সে প্রশ্নের জবাবে খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। বাসায় আসত। সে কারণে বিশ্বাস করে দিয়েছি।’

আইনজীবী খায়রুল ইসলামের মামলা তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার কানিজ ফাতেমা সোমবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যথেষ্ট প্রমাণ পেয়ে উম্মে ফাতেমা রোজীর দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছি। তাঁরা গতকাল আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দিও দিয়েছেন। সেখানে তাঁরা বলেছেন, রোজীর নির্দেশেই জাল ভিসা তৈরির কাজ করেছেন। মুঠোফোনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে রোজীর সঙ্গে তাঁদের কথোপকথনও আমাদের হাতে এসেছে। তাঁরা টাকা সংগ্রহ করে রোজীর দুটি অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছেন, সে তথ্যও আমাদের হাতে এসেছে।’

সংবাদ সম্মেলেন সিআইডি কর্মকর্তা ইমাম হোসেন বলেছিলেন, উম্মে ফাতেমা রোজীকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিচ্ছেন তাঁরা।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবারস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে। রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সুফিউর রহমান মুঠোফানে জানান, উম্মে ফাতেমা রোজী গত ২ জুলাই হাইকমিশন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। এক কোটি টাকা দেওয়ার জন্য তাঁকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি। গত ৫ জুলাই ওই লিখিত অভিযোগ বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তীকালে আইনজীবী খায়রুল ইসলামেরও একটি চিঠিও পায় হাইকমিশন, যা তিনি অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেওয়ার জন্য লিখেছেন।

হাইকমিশনার বলেন, ‘হাইকমিশন বাংলাদেশ সরকারের অংশ। তাই প্রবাসী বাংলাদেশিদের পক্ষ থেকে আসা কোনো আবেদন আমরা বাংলাদেশে পাঠাতে পারি।

কিন্তু কোনো তথ্য নিশ্চিত না হয়ে আমরা অস্ট্রেলিয়া সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি না। তবে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে হাইকমিশন এ বিষয়ে জড়িত হতে পারে। এ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার ফেডারেল পুলিশের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের একটা সমঝোতা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এক দেশে অভিযোগ করা আরেক দেশের পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পারে।’

হাইকমিশনার সুফিউর রহমান জানান, উম্মে ফাতেমা রোজীর বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার কোনো আইনি সংস্থার কাছে কোনো অভিযোগ রয়েছে কি না, সে বিষয়ে তাঁর জানা নেই। ফলে তাঁর সম্পর্কে কোনো সংবেদনশীল তথ্য অস্ট্রেলিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া দেশটির নীতিবিরোধী।

অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ হাই কমিশনে দেওয়া উম্মে ফাতেমা রোজীর ওই চিঠি সিআইডির হাতে এসেছে বলে মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা জানিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেছেন, ওই নারী আইনজীবীর বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের যে অভিযোগ করেছেন, তার সত্যতা পাওয়া যায়নি।

এদিকে অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ আবু তারিক বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার ভিসাপ্রাপ্তি ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আর্থিক লেনদেন খুবই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে। তাই সচেতন হলে প্রতারণার কোনো সুযোগ নেই। আবু তারিক বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসনের অনেকগুলো ধাপ রয়েছে। আর পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনে হওয়ার কারণে প্রতিটা ধাপের লাইভ আপডেট রাখা যায়। তাই সচেতনতাই প্রতারণার হাত থেকে রেহাই দিতে পারে।’

অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞ অভিবাসন আইনজীবী মোহাম্মদ নিজামউদ্দীন পরামর্শ দিয়েছেন, কেউ ভিসা–সংক্রান্ত তথ্য জানতে সরকারের ‘VEVO’ ওয়েবসাইটে যাচাই করতে পারেন। আর ভিসা–সংক্রান্ত যেকোনো সহায়তা সরকারের নিবন্ধিত সেবাদানকারীর কাছ থেকে গ্রহণ করলে তাঁর সব তথ্য যেমন যাচাই করা যায়, তেমনই কখনো কোনো সমস্যায় পড়লে তাঁকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ