সিলেট থেকে আসা আবদুল্লাহ রুবায়েতের অনুভূতিও প্রায় একই রকম। কলেজের নতুন বন্ধুদের সঙ্গে এত দিন ফেসবুকে কথা হতো। তবে আজ সামনাসামনি পরিচয় হলো। কয়েক মাস আগে এখানে ভর্তি হলেও আজ আবার যেন নতুন করে মেডিকেল কলেজজীবন শুরু হলো তাঁর।
দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর আজ দেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে ক্লাস শুরু হয়েছে। সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজে গিয়ে দেখা যায়, ক্লাস শুরুর বেশ আগেই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে চলে এসেছেন। কেউ কেউ আজই প্রথম ক্যাম্পাসে পা রেখেছেন। নতুন কিংবা পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে অনেক দিন পর দেখা হওয়ায় শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। ভবনের প্রধান ফটক দিয়ে ঢোকার আগেই শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছিল। হাত জীবাণুমুক্তকরণের ব্যবস্থাও ছিল। আর সবার মুখেই ছিল মাস্ক।
প্রথম দিনে প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় বর্ষ ও পঞ্চম বর্ষের ক্লাস হয়েছে। পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘করোনা সংক্রমণে কলেজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর মেহেরপুরে বাড়িতে ছিলাম। তখন থেকেই অনলাইনে ক্লাস করছিলাম। তবে গ্রামে ইন্টারনেটের সমস্যা থাকায় পরে ছাত্রাবাসে থেকে ক্লাস করতে হয়েছে। তবে এখন সশরীর ক্লাস শুরু হওয়ায় স্বস্তি পেয়েছি।’
কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের ডিসেকশনকক্ষে দেখা গেল সবাই মাস্ক পরে আছেন। তবে সেখানে সামাজিক দূরত্ব না মেনেই ক্লাস চলছিল। জানতে চাইলে অ্যানাটমি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মহিবুল হাসান খান বলেন, টিউটরিয়াল ও লেকচার ক্লাস নেওয়া হয়েছে। একটি শ্রেণির ১৮০ জনকে ৩টি ব্যাচে ভাগ করা হচ্ছে। তবু ৬০ জনের ব্যাচও বড় হয়ে যায়, আবার শিক্ষকসংকটও আছে। তাই ব্যালেন্স করাটা কঠিন। তারপরও সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবদুল আহাদ প্রথম আলোকে বলেন, অনেক দিন পর শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফেরায় সবাই খুব উচ্ছ্বসিত। প্রথম দিন কিছুটা উদ্বোধনী ক্লাসের মতো হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা মেনে আপাতত রুটিন সাজানো হয়েছে। ক্লাসের ব্যাপ্তি কমিয়ে বিরতি বাড়ানো হয়েছে। পুরোনো রুটিনে ফিরে যেতে কিছুটা সময় লাগবে। তবে শিক্ষক ও জায়গার সংকট আছে। তাই সামাজিক দূরত্বের বিষয়টা ঠিক রাখা কিছুটা মুশকিল হয়ে পড়ছে।
বিদেশি শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারেননি
খুলনায় বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজে সশরীর শ্রেণিকক্ষে ক্লাস শুরু হয়েছে। প্রথম দিনে এখানেও প্রথম, দ্বিতীয় ও পঞ্চম বর্ষের ক্লাস হয়েছে। এদিকে পঞ্চম বর্ষের ৯৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৮ জন উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন বিদেশি শিক্ষার্থী আগে থেকেই বাংলাদেশে ছিলেন। তবে ওই শ্রেণির আরও ৩৩ বিদেশি শিক্ষার্থী এখনো বাংলাদেশে আসতে পারেননি। এদিকে দ্বিতীয় বর্ষের ৩০ জন বিদেশি শিক্ষার্থীর সবাই অনুপস্থিত ছিলেন। প্রথম বর্ষের ৩২ জন বিদেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে কেউ ক্লাসে যোগ দিতে পারেননি।
গাজী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ বঙ্গ কমল বসু প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম দিনে সশরীর ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি সন্তোষজনক ছিল। তবে বিদেশি শিক্ষার্থীরা এখনো আসতে পারেননি। দেশে আসার পর তাঁদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। যদিও তাঁরা অনলাইন মাধ্যমে ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন। তবে তাঁদের দেশে আনার ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।